শিরোনাম

বাংলাদেশ চীনের দিকে অগ্রসর হলে কী ক্ষতি ভারতের ?

শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস, দেশটির পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক নীতিতে দৃশ্যমান পরিবর্তন এনেছেন। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে বর্তমান প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত। ২০২৪ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২.৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তবে এই বাণিজ্যের ভারসাম্যে ভারতের পক্ষে ঝুঁকে রয়েছে। ভারত বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে ১১.০৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা গত বছরের তুলনায় সামান্য কম। বিপরীতে বাংলাদেশ ভারতকে রপ্তানি করেছে মাত্র ১.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

এই বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নতুন দিক খুঁজছে। চীন সম্প্রতি বাংলাদেশে অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও প্রযুক্তি খাতে ২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ঋণ নয়, সরাসরি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছে—এটি অর্থনৈতিক কৌশলে একটি সুস্পষ্ট পরিবর্তন নির্দেশ করে।

ভারতের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর একটি কৌশলগত সম্পদ। বিশেষত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য—ত্রিপুরা, আসাম, মণিপুর এবং মিজোরামের জন্য এই বন্দরের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে কলকাতা থেকে ত্রিপুরার আগরতলায় সড়কপথে পণ্য পরিবহনে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন এবং ব্যয় হয় ৬৩০০ থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করলে পরিবহন খরচ নেমে আসে মাত্র ৫০০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে এবং সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যখন চীনের দিকে ঝুকছে ভারত তখন অন্যভাবে ইউনুস সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল গ্রহণ করেছে। চীনের ঝুকে পড়ার জবাবে এবার বাংলাদেশ থেকে চট্টগ্রামকে আলাদা করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন তিপ্রা মোথা নেতা তথা ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোৎ মাণিক্য। উত্তপূর্বের এই নেতা দাবি করেন, ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রামের পাহাড়ি মানুষজন ভারতের সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলেন। তখন চট্টগ্রাম বন্দর হাতছাড়া করা ভারতের জন্যে ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন প্রদ্যোৎ। এরই সঙ্গে ইউনুসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রদ্যোৎ মনে করিয়ে দেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ত্রিপুরা থেকে খুব একটা দূরে নয়।’ এই আবহে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়েই ভারতকে ‘রাস্তা করে নেওয়ার’ পরামর্শ দেন প্রদ্যোৎ।

রিপোর্ট অনুযায়ী, চিন সফরে উত্তরপূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন ইউনুস। তিনি নাকি বলেছিলেন, ‘উত্তর-পূর্বে ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। এই অঞ্চলে আমরাই সমুদ্রের দেখভাল করি। এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। এটি চিনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হতে পারে।’

এই আবহে প্রদ্যোৎ বলেন, ‘আমাদের আদিবাসীদের সমর্থন করে সমুদ্রে যাওয়ার পথ তৈরি করার সময় এসেছে ভারতের কাছে। একসময় চট্টগ্রাম শাসন করত এই আদিবাসীরাই। তাই আমরা আর এই অকৃতজ্ঞ শাসনের উপর নির্ভরশীল নই। ভারতের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ১৯৪৭ সালে বন্দরটি ছেড়ে দেওয়া। সেখানে বসবাসকারী পাহাড়ি জনগণ ভারতের অংশ হতে চাইতেন। জনাব ইউনুস মনে করতে পারেন যে তিনি সমুদ্রের অভিভাবক, কিন্তু বাস্তবতা হল তিনি প্রায় ৮৫ বছর বয়সি একজন স্টপ-গ্যাপ নেতা। ভুলে গেলে চলবে না, তিনি যে বন্দরের কথা বলছেন তা ত্রিপুরা থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে।’

তাছাড়া ভারত পাহাড়ে থাকা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকেও সক্রিয় করার চেষ্টা করছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।

এ প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক কৌশলে চীনের প্রতি দৃঢ় মনোযোগ এবং ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের ভারসাম্য নতুন করে মূল্যায়নের সময় এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহারসহ আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে ভবিষ্যতে কী ধরনের সমঝোতা গড়ে ওঠে, তা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

এছাড়াও দেখুন

চিকেন’স নেক নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভারত, ভারী অস্ত্র মোতায়েন